ads top

Mechanical Engineer imported Cars

 

বিজ্ঞান ও শরীর সম্বন্ধীয় কোন বিষয়ে আলোকপাত করার ধৃষ্টতা আমার নেই। আমি কোনো বিজ্ঞানী বা দার্শনিক নই। একজন সাধারণ জ্ঞানানুসদ্ধিৎসু হিসাবে দুই একটি কথা পাঠকের কাছে তুলে ধরাই এই আলোচনার উদ্দেশ্য। ভুল-ত্রুটি মার্জনীয়।

মন, মস্তিষ্ক ও হৃদয়
Mind, Brain & Heart

শরীর সম্বন্ধীয় এই তিন পরাশক্তির কোনটিরই ক্ষমতা অন্যটির চেয়ে এককভাবে কম নেই। তিনটি পরাশক্তি পরিপূরক হিসাবে কাজ করে বলেই মহাপরাক্রমশালী এই মানব শরীর সুন্দর ও সাবলিলভাবে চলতে পারে। এই তিন পরাশক্তির ভারসাম্যে বিচ্যুতি ঘটলেই নেমে আসে বিপর্যয়।
সম্পূরক বা পরিপূরক আলোচনার আগে তিন পরাশক্তি সম্পর্কে সংক্ষেপে আলাদা আলাদা আলোচনা করা দরকার। কারণ কোন শক্তিহীন আলোচনা আলোচ্য বিষয়ের শক্তিমত্তার দ্বারা উৎরে যেতেও পারে। কার্যকরণের দিক থেকে মস্তিষ্কের প্রাধান্য বেশি। বিজ্ঞানের ভাষায় মানুষের সকল ক্রিয়া কর্ম মস্তিষ্কের দ্বারাই সম্পন্ন হয়ে থাকে। এ জন্য মস্তিষ্কের আলোচনা পূর্বাহ্নে করা হলো।

মস্তিষ্ক

মস্তিষ্ক কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের পুরোভাগ, যা মাথার মধ্যে অবস্থিত এবং দেহের প্রধান নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র। মস্তিষ্কেরও তিনটি ভাগ রয়েছে। যেমন- অগ্র মস্তিষ্ক, মধ্য মস্তিষ্ক এবং পশ্চাৎ মস্তিষ্ক। মানুষের মস্তিষ্কের কার্যকারিতা এখনো পুরোপুরি বুঝে ওঠা সম্ভব হয়নি। তাই বর্তমানে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সবচেয়ে জটিল ও রহস্যময় বস্তু হলো মানুষের মস্তিষ্ক। গড়পরতায় মানুষের মগজের ওজন দেড় কিলোগ্রাম যার মধ্যে প্রায় এক বিলিয়ন সংখ্যক নিউরন বা স্নায়ুকোষ আছে। দেহের ওজনের তুলনায় মানুষের মগজের ওজন ও আকৃতি আমাদের নিকটতম প্রজাতির তুলনায় অনেক বেশি। মস্তিস্কের স্নায়ুকোষগুলো খুবই সংবেদনশীল। স্নায়ুকোষ একবার মরে গেলে আর নতুন করে গজায় না। দেহের অন্যত্র কোষের প্রতিস্থাপন ঘটলেও স্নায়ুকোষ তার ব্যতিক্রম। তাই মস্তিস্ক কোনো কারণে আঘাত পেলে বা স্নায়ুকোষ ক্ষতিগ্রস্ত হলে সে আঘাত থেকে ফিরে আসা যায় না। মস্তিষ্ক আঘাত পেলে মানুষের মানসিক কর্মকাণ্ড ব্যাহত হয়।

আমাদের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য, হাসি-কান্না, দুঃখ-কষ্ট, ব্যথা-বেদনা, অশ্রু এসবের উৎপত্তি আমাদের মস্তিষ্ক থেকেই, অন্য কোথাও থেকে নয়। এর সাহায্যেই আমরা চিন্তা করি, বুঝি, দেখি ও শুনি, সুন্দর ও অসুন্দরের পার্থক্য করি, আরাম ও কষ্টের পার্থক্য করি, ভালো ও মন্দের পার্থক্য করি।”
মস্তিষ্কেই মানুষের মননের উৎস, তার চেতনা, তার ‘আমিত্ব’।

মন

মন দর্শনশাস্ত্রের একটি অন্যতম কেন্দ্রীয় ধারণা। মন বলতে, বুদ্ধি এবং বিবেকবোধের এক সমষ্টিগত রূপ যা চিন্তা,অনুভূতি, আবেগ, ইচ্ছা এবং কল্পনার মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। মন কি এবং কিভাবে কাজ করে সে সম্পর্কে অনেক রকম তত্ব প্রচলিত আছে। এ সব নিয়ে চিন্তা-ভাবনা আরম্ভ হয়েছে মূলত প্লেটো, এ্যারিস্টটল এবং অন্যান্য প্রাচীন গ্রীক দার্শনিকিদের সময়কাল থেকে।
মন এর সঠিক সংজ্ঞা সম্ভব নয়। তবে এইভাবে বলা যেতে পারে, মন হলো এমন কিছু যা নিজের অবস্থা এবং ক্রিয়াগুলি সম্পর্কে সচেতন। মনের স্বরূপ লক্ষণ হলো চেতনা যার থেকে মনকে জড় থেকে আলাদা করা হয়।

সাধারণত মনকে তিনটি ভিন্ন অর্থে গ্রহণকরা যায়:-

- মন বলতে চিন্তা,অনুভুতি ও ইচ্ছা-এই মানসিক কাজ গুলোর সমষ্টিগত রূপ বুঝায়।

- মন বলতে চিন্তা, অনুভুতি ও ইচ্ছা-এই মানসিক কাজগুলি থেকে স্বতন্ত্র দেহাতিরিক্ত        একস্থান, অপরিবর্তিত আধ্যাত্ম সত্তাকে বুঝায়।

- মন বলতে এক মূর্ত আধ্যাত্মিক ঐক্যের সম্বন্ধ যা চিন্তা, অনুভুতি ও ইচ্ছাপ্রভৃতি মানসিক প্রক্রিয়া ছাড়া কিছুই নয়, অথচ যা নিজের স্বাতন্ত্র না হারিয়ে এই সকল মানসিক কাজের ভিতর দিয়ে নিজেকে প্রকাশ করে।

প্রথমটি হলো মন এর অভিজ্ঞতামূলক মতবাদ পরেরটা আধ্যাত্মিক-মতবাদ, শেষেরটা ভাববাদীদের মতবাদ।

হৃদয়

হৃদয় বা হৃৎপিণ্ড মানবদেহের একটি পেশিবহুল অঙ্গ। এটি পৌন:পৌনিক ছান্দিক সংকোচনের মাধ্যমে রক্তনালীর ভেতর দিয়ে রক্ত সারা দেহে প্রবাহিত করে। গড়পড়তায় একটি মানব হৃৎপিণ্ড প্রতি মিনিটে ৭২ বার স্পন্দিত হয়।
মানব হৃৎপিন্ড ৪টি মূল প্রকোষ্ঠে বিভক্ত, ডান অলিন্দ ও ডান নিলয় এবং বাম অলিন্দ ও বাম নিলয় । অলিন্দদ্বয় আন্তঅলিন্দ দেয়াল এবং নিলয়দ্বয় আন্তনিলয় দেয়াল দ্বারা পৃথক থাকলেও ডান অলিন্দ ও ডান নিলয়ের মাঝে ট্রাইকাস্পিড কপাটিকা এবং বাম অলিন্দ ও বাম নিলয়ের মাঝে বাইকাস্পিড কপাটিকার মাধ্যমে একমুখী সংযোগ বিদ্যমান । হৃৎপিন্ডের সর্ববামের নিম্নগামী ভোঁতা অংশকে এ্যাপেক্সবলে। হৃৎ স্পন্দন শোনার জন্য একটি স্টেথোস্কোপ সরাসরি এ্যাপেক্সের উপর স্থাপন করা যায়। এটি বাম মধ্য-ক্ল্যাভিকুলার রেখায় ৫ম ইন্টারকস্টাল স্থানের পেছনে অবস্থিত। স্বাভাবিক পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তির হৃৎপিন্ডের ওজন ২৫০-৩৫০ গ্রাম (৯-১২ আউন্স)।
· প্লেটো মনে করতেন যেহেতু মস্তিষ্ক গোলাকার, গোলক একটি আদর্শ ঘনক, তাই এই মস্তিষ্কই চেতনার আধার। লিওনার্দোর আঁকা ছবিগুলো থেকে মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষগুলোর বিন্যাস সম্পর্কেআমরা অনেকটাই জানতে পারি। মস্তিষ্ক নিয়ে বিজ্ঞান-সম্মত পর্যবেক্ষণের এটাই প্রথম ধাপ।

- দেকার্তের মতে পশু ও মানুষের দেহের যান্ত্রিকতা তুলনীয়, কিন্তু অতুলনীয় হলো মানুষের মনন। এই মননই মানুষকে পশুর থেকে আলাদা করে। তিনি মনে করতেন মনন বা চেতনার উৎস মস্তিষ্কের পেছনের দিকে অবস্থিত পিনিয়াল গ্রন্থি।

- হৃৎপিণ্ড রক্ত পাম্প করে এবং যেহেতু রক্ত বিনা শরীর মৃত, তাই অ্যারিস্টটল মনে করতেন হার্টই সকল চেতন-শক্তির আধার।

শেষকথাঃ

উপরের বর্ণনা থেকে বুঝা যায়, কোন পরাশক্তির অবস্থানই কম নয়। তবে মস্তিষ্ক এই তিনের লিডার। মানুষের কামনা বাসনার সাফল্য নির্ভর করে শরীরের সামর্থের উপর। এই অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সক্ষমতা নির্ভর করে রক্তগুণের উপর। মনের চাহিদানুপাতে মস্তিষ্ক নির্দেশ দান করলে শারীরিক সামর্থের অভাবে যদি সেই চাহিদা পূরণ না হয়, তাহলে ? আবার মনের চাহিদা অনুযায়ী মস্তিষ্ক যদি নির্দেশ দিতে ব্যর্থ হয়, তাহলে ? মস্তিষ্ক এবং মন এই দুইয়ের মধ্যে যাতে সমন্বয় হয়, সে কাজ করে হৃদয়। হৃদয় হলো রক্ত শোধনাগার। রক্ত ভালো যার, সব ভালো তার।
-

সাগর আল হেলাল
কলামিস্ট

১৬.০৩.২০২২





Share on Google Plus

About Sagor Al Helal

Lyricist: Bangladesh Betar and Television.

0 Comments:

Post a Comment